আজ সূর্য্যগ্রহণ। কথা ছিল চাঁদ ঢাকবে। ঢেকে দিলো মেঘে। গ্রামের সেই রাঙা মাটি রইলো কাদা মেখে।
― ও বৌ! আজ তোমার কাপড় মেলেও নেইকো কাজ। এই শীতের অকাল বরষে আশা ছাড়া কিছুই শুকোবে না কাজ।
জ্বালন সব ভিজে পড়ে। উনুন জ্বলবে কষ্টে। ভাত হতে দেরি হবে। এই উনুন ধারে বসো সবে। জড়সড় হয়ে। এই নাও, কুড়ো। ঠাকুমার গপ্পো শোনো। মাঝে মাঝে কুড়ো দাও। মন ভরবে। হাঁসি ঠাট্টার চাপে খিদে থাকবে ভুলিয়ে।
― দাদু, আজ তেল মাখবে না? গপ্পো শুনবো।
― রোদ যে ওঠে নাই, দাদুভাই। বড্ড শীত। ঘাটে খুব পিছল।
― এই খোকা! কাজ নেই আর তোর?! কম্বলটা পেরে দে দাদুকে।
খড়ের পালুইয়ে খীন আওয়াজ।
― এই খোকা – দেখে আয় রে! কুকুর ছানাটে ভিজে না যায় মরে!
― কাঁপছে গো, মা!
― সব্বোনাশ! মুছিয়ে দে রে শিগ্গির! এইনে, গরম দুধটা খাইয়ে দে। ওকে গোয়ালের কোণে রেখে দে। – হায়রে! গরুগুলো পাঁচদিন নাওয়াইনি। আজ আবার জল নেমেছে – কেঁপে মরে!
― মা, সেই ম্যাশিনটা কিনবে? জল গরম করে। বাবুদের ঘরে আছে!
― তুই আর বকিস না! কেন রে, তোর গায়ে বুঝি হাঁড়ির জল ঠেকবে না?
― শোনো ভাইয়ের কথা। তুই থাম তো!
― ও দাদুভাই। এনেই বা করবি কি? তার তো আছে, কারেন্ট যে নাই।
মেঘ ঘনিয়ে। দিন ঢেকে। ভোর আর সাঁঝ একই সাজে। উজ্জ্বল গ্রামে, স্বচ্ছ দেশে, আজও হ্যারিকেনই আলো দেখায়।
― বউমা, তুমি সন্ধে দিয়ে দাও। দেখো আবার। কাদা পিছল ভারি। আজ আর উনুন জ্বেলো না। মুড়ি আছে। দুধ দিয়ে খেয়ে নেবো।
― বউমা, ছেলেগুলো ঘর ঢুকেছে?― না, বাবা। ফোন করেছে। এই ঢুকছে। কার্ত্তিকদের ঘর হয়ে আসছে। কেরোসিন নাই। নিয়ে আসছে।
ভিজে মাটি। ভিজে ঘাস। শীতের দিনে আকাশ নিরাশ। কুকুর-গরু তেমন ডাকেই নি বেশী। কুয়াশা ঢাকা মাঠের ধার। জ্বলছে বিড়ি। একটু দেশী।
গায়ে মোটা কাপড়। মাথায় পাতলা ছাদ। পেটে কিছু খাবার। মুখে একটু স্বাদ। ঠাকুর আমাদের রাখেন কৃপায়। মলিন সুখে জীবন চলে যায়।
ছোট গল্পের ছোট্ট পুনশ্চ। কবিরা কিনা বড্ড ছোটলোক। বাক্য টেনে মোচড় মারে। প্রেম-কান্না ভাঙ্গিয়ে খায়। দেখোই না! নন্দী আপদ কলম ধরে। পশুপতির মন রাঙায়।
—পশুপতির মিতবাক্যাদেশপ্রাপ্ত নন্দী
রাইপুর / Raipur, Pauṣa Amāvasyā,
The 26th of December in 2019 CE.