ইষ্টের বিসর্জ্জন

পুজো শেষে ঠাকুরমশাই তাঁর ইষ্টবিগ্রহের দিকে তাকালেন।

আবাহন হল​। পুজোও হল​। ষোড়শ উপচারে। শ্রদ্ধান্বিত মনে তিনি একে একে সব নৈবেদ্যই দিলেন যথাযথ মন্ত্রে। তিনি যা জানতেন​, সবই করলেন​। “যথাজ্ঞানং করবাণি” – তা-ই ত প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বরণে – যা জানি, যদ্দূর জানি, তা করব – ত্রুটি রাখব না – যা জানি না, কি করেই বা করব? যা সাধ্য, তা-ই করেছি।

সবই ত দেওয়া হল। এবার কি তা হলে চাওয়ার পালা?

পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র বঙ্গের গৃহে গৃহে মুখস্থ। “পুত্রং দেহি”, “ধনং দেহি”, “ভাগ্যং দেহি”, “সর্বকামাংশ্চ দেহি মে” – পুত্র দাও, ধন দাও, সৌভাগ্য দাও, সর্বকামনা পূর্ণ করো – দেহি, দেহি, দেহি – দাও, দাও আর দাও। থাকলেও দাও। না থাকলেও দাও। অন্যের কম পড়লেও দাও। বেশী থাকলে ক্ষতি কি? যত পারো দাও।

ঠাকুরমশাই এই কথা ভাবতে ভাবতে মুচকি হেঁসে ফেললেন নিজের মনে। তাই ত! অতিথি ঘরে এনে, খাইয়ে-দাইয়ে এবার ফর্দ্দ ধরানো – এই দাও, ওই দাও, এই চাই, ওই চাই।

ঠাকুরমশাই ইষ্টহৃদ​য়ে অমনস্ক হ​য়েই ক’টি ফুল আলাদা করে নিলেন। থালায় ফুল শেষ হয়ে এসছে। পুজো শেষের দিকে। বিসর্জ্জন হবে ক্ষণে। তিথি আর কতক্ষণ? ইষ্টেরও ত তাড়া আছে। যতই রাখতে চাই, নাথ, তোমায় আর কে রাখতে পারে? কোন তিথি-ই বা থাকে? সব তিথি চলে যায়। অতিথিও চলে যায়।

“ওহে নাথ!” – ঠাকুরমশাইয়ের মুখে আর সংস্কৃত বেড়োল না – হাতে একটি ফুল নিয়ে অসংস্কৃত ভাষাতেই বললেন – হে নাথ! এ কি মায়া! এ আবার কেমন ভোগের আশ? দেওয়া মাত্রই আবার চাইতে বসে? দেবতাকেও খাওয়াব, কিন্তু তারপর নিজেও খাব। দেবতাকে ভোগ নিবেদন করব​, তারপর এই-ওই চেয়ে নিজের ভোগ মেটাব। যা-ই চাইব, আগে তোমার মুখে চাইয়ে নিয়ে তোমার প্রসাদ বলে বেমালুম ভোগ করব​? তুমি ত অনন্ত ধনের ভাণ্ডার, তাই ত তোমার কাছে সব চাওয়ে যায়। সবই সৃষ্টি করেছে যে কিনা, সে ত আবার নতুন জিনিস তৈরি করে এনে দিতেই পারে। চাইলেই হল​। আমাজনে অর্ডার দেওয়ার মতন। পুজোতে ক্লিক্ করলেই ভোগ বাড়িতে ডেলিভারি দিয়ে যাবে। এক ভোগ মিটলেই আরেক ভোগের অফার আসে। তুমি যেমন অনন্ত, তেমনি তোমার খেলাও – না আছে শুরু, না আছে শেষ। সত্যি-ই ত! ফল না পেলে, ভোগ না পেলে পুজো করবোই বা কেন? এত ভালবাসলাম তোমায়, কিছুই কি ফল পাব না? যাতে ফল নেই, সেটা নিশ্চই পুজো ছিল না, কোন ভালবাসা ছিল না তাতে। এ যুগে সব ইন্স্ট্যান্ট চাই – চাই ত এক্ষুণি-ই চাই – আসতেই হবে – না আসলে তুমি ভালবাসো না – ওয়ান্ ডে ডেলিভারি – না পেলে অন্য দোকানে চলে যাব, বাপু, তোমার দ্বারা হবে না!

“হে নাথ!” – ঠাকুরমশাই ইষৎহাস্য মুখেও দীর্ঘশ্বাস ফেললেন – এই অনাদি অনন্ত লোভ, নাও, নাও হে শ্রীচরণে – হরণ করো! আর কাজ নেই আমার এতে। হাতের ফুল তুলে দিলেন বিগ্রহের চরণে।

আরেকটি ফুল নিলেন। তাকালেন ইষ্টের দিকে। ফের মুচকি হেঁসে নিজের দেহের দিকে তাকালেন। ধিক্কারবোধ করলেন। “এই দেহ-ই ত মূল, নাথ!” – ঠাকুরমশাই বলে উঠলেন – “এইখান থেকেই ত সব শুরু!” দেহ-ই ত লোভের যত উর্ব্বর জমি। যত কামনা-বাসনার বীজ, সবই ত এখানেই ফসল হয়। তাতে চাষ করেই চলে যায় সংসারের। তুমি-ই বলো না!  দেহ থেকেই যত তৃষ্ণা, যত ক্ষুধা – এই দেহেরই স্পর্শ, এই দেহেরই স্পন্দন – বলই ত কে না চায়? কে না চায় রক্তমাংসের দেহ স্পর্শ করতে? দেবতারাই কী-ই বা ছাড় পায়, বলো? মানুষের মতন শরীর না করে দেবতার মূর্ত্তি হয়? সে না হয় দুটোর জায়গায় তিনটে চোখ আর বেশ কয়েকগুলো হাত। তা ছাড়া ত তোমায় কেউ চিনবে না, নাথ!

শরীরকে কাছে কে না চায়? সবাই চায়! সবাই চায় রক্তমাংসের দেহ পাশে বসিয়ে, খাইয়ে-পরিয়ে, স্নেহ-আদর করে পুজো করতে। কজন বলে – দূরে থাকলেও চলবে? কজন বলে – দেহ ছাড়াও চলবে? দূরে থেকে পুজো হয়? শরীর না সামনে পেলে পুজো হয়? হয় না। হয় না! যেমন মানুষ, তেমনি তার দেবতা!

দেহ থাকলেই থাকে দেহ-বোধ। দেহ থাকাতেই কাছে পাওয়ার ভ্রান্তি। শরীর ছাড়া প্রাপ্তি হয়? যে জন শরীরে করে পুজো, সে ত শরীর পাওয়াকের প্রাপ্তি বোঝে। তোমার মূর্ত্তি ঘরে এসেছে, আর ব্যাস্! আবার কি? কজনের সৌভাগ্য হ​য়? বিগ্রহ ঘরে এসছে মানেই তুমি প্রাপ্ত হয়েছ। তৃপ্তি মিটল খানিক। আবার যে-দিন আসবে, আবার হবে। আবার আসছে বছর। মানুষ যেমন, তার দেবতা কল্পনাও তেমন। দেবতা থাকে মৃণ্ময়ে, দেবতা থাকে মন্দিরে-প্যাণ্ডালে – কুমোর-পাড়া থেকে আসে আর গঙ্গার ঘাটে যায় – ধূতি-শাড়ি-মালা পরে সাজে, ভক্তদের সাথে সেলফি তুলে ইন্স্টাগ্রাম ভ্রমণ করে – যেমন বলিহারি ভক্ত তোমার, তেমনি তাদের ভক্তি। তুমি তাদের যেমনি নাচাও, তেমনি তারা নাচে।

এই দেহতেই কামনার বীজ জেগে থাকে। আর মানুষ তা মেটাতেই তোমায় ডাকে। খিদে মিটলে আর কে মনে রাখে? কজন ক্ষুধা ধরে রাখে? এ ক্ষুধা মিটালেই ত তুমি চলে যাবে – তাই ভুগব, ভুগতেই থাকব – কারণ যত ভুগব, তত তোমায় পাওয়ার প্রয়াস করব – এ সোনার গৌর ছেড়ে দিলে, নাথ, আর পাব না!

কামনার অধিপতি তুমি-ই, আবার এই কামনাই তোমার পাশ। এই কামনাই ভোগের মূল, আবার এই কামনাই আসক্তির আকড়। তোমারই দান, নাথ, তুমি-ই নাও – যা জাগাবার জাগিয়েছো, যা জ্বালাবার জ্বালিয়েছো, যা ভোগাবার ভুগিয়েছো – সব দংশন, সব বিরহ, সব যন্ত্রণা, সব শোক, সব আগলে রাখলাম – তোমারই যা সব দান, তোমারই যা সব আশীষ, যা বিনা তোমায় ভালবাসতে শিখতাম না আর চিনতেও পারতাম না – “এই সব আমি রাখলাম, আর তোমার দেওয়া এই কামনা সব তোমাকেই দিলাম” – ঠাকুরমশাই আরেকটি ফুল বিমল-নয়নে বিগ্রহের চরণে তুলে দিলেন – “কামৈতত্তে!”

চুপ করে গেলেন কিছুক্ষণ। আর যেন বিগ্রহের দিকে তাকাতেই পারলেন না। মাথা নত। চোখ বুঝে গেল।

“কাম-লোভ সব দিয়ে দেওয়াই ভাল​, নাথ” – মৃদু স্বরে শুরু করলেন – “তোমার কাছে ত সবই বিফল!” চেয়েই বা কি লাভ? তুমি কি আদৌ শোনো? যুগযুগান্তরের যে আমার উপাসনা, কোনদিন নজরে পড়েছে? তোমার আসা-যাওয়া অনেক দেখেছি – যে যত মূর্ত্তিতে এনেছে, সেজে-গুজে ঘরে ঘরে চড়ে বেড়িয়েছ – সবার আদর-যত্ন নিয়েছ – নিতে ত্রুটি রাখনি আর দিতেও ত্রুটি রাখনি। মনে পড়েছে আমার কথা? যে যত দিয়েছে, তাকে তত দিয়েছ – আর আমায় অনাথ করে রেখেছ আর যুগযুগ আমার হৃদয়ের নিত্য সেবা ভোগ করেছ।

বলি, লজ্জা করেনি তোমার? অপদার্থের মতন তোমার ভজনা করেছি, কিছুই না পেয়ে – আর তুমি অপদার্থের মতন চুপ করে গ্রহণও করেছ, কিছুই না দিয়ে। সবার হাতের স্পর্শে ত প্রণাম নিলে, সবার চব্য-চোষ্য ভোগ নিলে – আমি কি এতই অযোগ্য তোমার চোখে? তুমি কি একটুও ভাবলে না আমার কথা? একদমই মনে রাখনি? কত জন্মের পাপের ফল ভোগ করাচ্ছ আমায়, হে নাথ? আমি-ই বা কত নেব?

সত্যি-ই ত! তুমি কি আর আমার বৈ একার দেবতা? তুমি ত পাবলিক্ – তুমি সবার। যতই ভালবাসি, যতই ভজনা করি, শেয়ার করেই চলতে হবে সবার সাথে – তুমি কেবল আমার হতে যাবে কোন দুঃখে? কী-ই বা আমার অধিকার? তুমি হলে দেবতা। মানুষের মত কি তোমার আর মায়া-দ​য়া থাকবে? তোমার থেকে সেই আশা রাখাও আমার মূর্খতা!

তুমি আর কেন সাড়া দেবে? আমি সাধনা বন্ধ করলে তোমার আর কি এসে যায়? তোমার জগৎ জুড়ে  ভক্ত – তুমি ভালোই থাকবে – আমি বাঁচি-মরি তোমার আর কি? তোমার সব একাউন্ট থেকেই ত আমি ব্লক্ড্ – আমার আর মেসেজ তোমার কানে পৌঁছোয় না – আর আমি কি তোমার ঠিকানা জানি যে বাড়ি গিয়ে হাজির হব​? তুমি তোমার ভক্তদের ভোগেই মেতে থাকো – আমি অনশন করে মরলে তোমার আর কি? আমার ভালবাসা আমার কাছে মূল্যবান হলেও তোমার কাছে ফেলনা। তাই-ই বোধহ​য় মুখ ঘুড়িয়ে থাকো। আমার থাকা না থাকা তোমার কাছে সমান।

নিষ্টুরতাই পেয়েছি। আমার নিত্য সেবার মহাপ্রসাদ। যোগ্য প্রসাদই দিয়েছ বোধহয়। বোধহয় সেবায় বিরক্ত তুমি। কি আর করব, নাথ, এই মহাপ্রসাদই ভোগ করি – মাথায় তুলে রাখি। যদি তা-ই যোগ্য মনে করেছ, যদি তা-ই সমিচীন মনে করেছ, তবে তাই হোক। সর্বস্ব দিয়েও, নিঃস্ব হয়েও, যদি নিবেদন করে যেতে হ​য়, তা-ই করব।

আর অভিযোগ করব না। আর অভিমান করব না। আর জেদও করব না। আমি এই শূন্য হৃদয়েও প্রেম নিবেদন করতে থাকব। আমি আমার সাধ্যের মতন সমস্ত প্রেম তোমায় দিলাম। আর রাখলাম না কিছু নিজের জন্যে। আর প্রয়োজন নেই। যা বা শ্রদ্ধা, ভক্তি, দয়া ছিল, আজ তোমার হল। আজ আর একটু একটু করে দিয়ে অন্যদের জন্যে রেখে লাভ নেই। সব নাও। সব তোমার। সব নিয়ে নাও!

ঠাকুরমশাই ক্রুদ্ধশ্বাসে মুষ্টিবদ্ধ করে তিনটি ফুল – “এই নাও ক্রোধ! এই নাও মদ! এই নাও মাৎসর্য্য!” – এই বলে ইষ্ট উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করলেন আর শ্বাস ফেললেন। তাঁর মুঠিও আলগা হল। আরক্ত নয়নও শান্ত হল​।

“জানি তাও” – ঠাকুরমশাই শেষে বিগ্রহের চোখে চোখ রাখলেন – “স্বীকার করতেই হবে!” তোমার অভাবেই তোমার সঙ্গ পেয়েছি। তুমি যদি না আমার থেকে সর্বস্ব নিয়ে আমায় নিঃস্ব করতে, আমি তোমায় চিনতে পারতাম না। ওই তোমার ভক্তদের মত চাওয়া-পাওয়ার চক্করে পড়তাম – আজীবন দৌড়াতাম। আজ থমকে দাঁড়িয়ে আমি – তাই তোমায় দেখতে পেয়েছি।

তোমাকে চেনা যায়, কিন্তু তোমাকে পাওয়া যায় না। তুমি হলে গিয়ে ঘোর আঁধার – কালীর মতন – তুমি-ই সবার মধ্যে আলোর কামনা জাগাও, কিন্তু আলো জ্বললেই লুকিয়ে প​ড় – “আঁধার কই? আঁধার কই?” – আলো জ্বাললেই আঁধার ভ্যানিশ্ – তৃষ্ণা মিটালে তৃষ্ণা চলে যায় – নিদ্রা কাটলেই নিদ্রা হারিয়ে যায়। সেই অভাবময় অব​য়ব তোমার। তোমাকে ত্যাগেই পাওয়া যায়। কেবল অপ্রাপ্তিতেই তোমার সাক্ষাৎকার – আর বিকল্প নেই।

তাই তোমার জন্যে তিলে তিলে ভুগেছি – স্বেচ্ছায়! – আর তোমায় তিলে তিলে উপভোগও করেছি। তুমি আমার বেদনায়, আমার রোদনে, আমার হাহাকারে, আমার ক্ষুধা-তৃষ্ণায় তিলে তিলে বিরাজ করেছ – আমার বিরহেই তোমার সোহাগ ভোগ করেছি – সেই অমৃত মুখে নিয়েছি যা কোন দিব্য-কুম্ভেও ধরা যায় না – সেই অনন্ত স্রোত, সেই অনাদি প্রবাহ, সব পেয়েছি এই দেহের জীর্ণতায়, এই হৃদ​য়ের শূন্যাগারে। তোমার চোটে সব খালি করে না দিলে কি করে বুঝতাম এত কিছু? তোমার আঘাতে চিতারোহণ না করলে কি করেই বা এই স্বর্গভোগ করতাম? তোমার দাপটে সব ভেঙ্গে চুরমার করেছি – আর শেষে পরমানন্দে লীন হ​য়েছি।

তুমি বরাবরই ছিলে, হে নাথ! যখন তোমার নামও শুনিনি, যখন তোমার মুখও দেখিনি, যখন জানতাম না তোমায়, তখনও ছিলে আমাতে – আমার হৃদ​য়ই তোমার মহাপীঠ ছিল – আমি মূর্খ নরাধম বুঝিই নি ছাই! আজ সব জ্বালিয়ে ফেলে, আজ সব নিভিয়ে দিয়ে, এবার অবগত হলাম। আর না রইল ক্ষুধা-তৃষ্ণা আজ – আর না রইল পাওয়ার আশ। যাও এবার যেথায় নাচবে, যত্তো ভক্তদের কীর্ত্তনে – যাও নাচিয়ে এসো। আর না রইল অভিমান। সগুণে যাও যেথা খুশি – নির্গুণে তুমি চিরতরে হেথাই।

যত প্রেম ছিল, যত শ্রদ্ধা, যত দ​য়া, যত ভক্তি – এই চারি পুরুষকার – আর দৈব পঞ্চম – এই আমার হৃদ​য়ের পঞ্চবিধ অর্ঘ্য আজ তোমায় দিলাম। আর দিতেই থাকব। অনবরত​। যাবজ্জীবৎ –

যাবজ্জীবৎ আমার প্রেম-শ্রদ্ধা-দ​য়া-ভক্তি তোমাতে দিতে থাকব – যাবজ্জীবৎ আমার কায়-বাক্-মন তোমাতে দিলাম। কোন ফলের আশ রাখলাম না – কোন নিরীক্ষণ ন​য়, কোন অভিযোগ, কোন অভিমান, কোন উদ্বেগ, কোন শোক রইল না আর – এই অর্ঘ্যের যা উচ্ছিষ্ট রইব, তা-ই হবে আমার ভোগ। তা-ই হবে আমার উপভোগ।

“এই নাও!” ঠাকুরমশাই রক্তজবা হৃদ​য়ে ধরলেন ও স্নেহের চোখে ইষ্টবিগ্রহের দিকে তাকিয়ে বললেন – “এই যে তোমার অন্ধ-মোহবন্ধ যত​!” নাও! নিয়ে নাও! বিমুক্ত করো!

শেষ।

পুজো শেষ।    

অনেক পুজো হ​য়েছে। ইষ্ট বোধহ​য় এবার অপরাধ নিয়েছেন। এত উদ্ব্যস্ত করা হল।

“কি গো, নাথ?” – ঠাকুরমশাই শুধাইলেন – “খুব রাগ করেছ আমার উপর, না?” খুব জ্বালিয়েছি তোমায়। কী-ই বা পুজো জানি বলো ত – কী-ই বা জানি কেমন আবাহনে তুমি তুষ্ট হবে? “আবাহনং ন জানামি ন জানামি চ পূজনং” – বলই না! কী-ই বা জানি তোমায় ভালোবাসতে – তোমার কত মন্ত্র-তন্ত্র – যে সব না বললে তুমি আমায় পাত্তাই দেবে না।  আমি কি করে জানব তোমায় কোথায় ডেট্-এ নিয়ে গেলে তুমি প্রীত হবে? কি করে জানব তোমায় কোন-কোন সমুদ্রতটে-হিলস্টেশনে ঘোরালে তোমার মন ভালো থাকবে? আমি অপদার্থ! অপদার্থের ন্যায় ভালোবেসেছি – পোড়া কপাল আমার!

আমি কি বুঝি বলো ত অতসব আধুনিক জামানার চারুকলা? আমি পারাগাঁয়ের মূর্খ গো – আমার কী বলায় কী বুঝেছ কে জানে? আমি অতসব বিধি জানি না – কখন কোনটা বলতে হয়, কখন কোনটা করতে হ​য় – কী জানি বাপু তুমি ওসব আশা করে বসেছিলে – নিরাশ করে ফেলেছি, হায়! কে জানে কত কিছু বলার, কত কিছু করার কথা মাথায়ই আসে নি। তোমায় প্রদর্শন করে বেড়াইনি – না সেলফি তুলেছি, না ইন্স্টাগ্রামে ফলাও করে দেখিয়ে বেড়িয়েছি, না লোকে লোকাল​য়ে বগলে নিয়ে ড্যাং ড্যাং করে ঘুড়েছি – নিজের কাছে রাখতে চেষ্টা করেছিলাম – আর তাতেই কাল হ​য়েসে!

তুমি হলে রাজরাজেশ্বর – প্রাসাদে প্রাসাদে বিরাজ কর​, রাজভোগ খেতে অভ্যস্ত, রাজপুত্তুরদের সাথে বিলাসে বিচরণ কর – দীনের সেবা কি আর তোমার পোশাবে? একান্ন ব্যঞ্জন খাওয়া মুখে কি আর নিরামিষ খিচুড়ি-ভোগ ঠেকে? একপাকের রান্না আমার আর স্বপ্ন দেখি সাতপাকের।

অপরাধ ত হবেই, নাথ! আমি কাঁচা মানুষ গো – কতই না ভুগিয়েছি তোমায় – কত অভিমান করেছি, কত ডাকের সাড়া দিইনি, কত চেল্লামেল্লি করেছি, কত রাগ দেখিয়েছি, কত তাণ্ডব করেছি তোমার জীবনে, কতবার মন ভেঙ্গেছি – অপরাধ না নিয়ে কি আর থাকা যায় বলো? এখন কাঁচা কাজের ক্ষমা চাইতে বসেছি – কতবার ক্রুদ্ধা রাইরাণীর কটুবাক্যে কাঁলাচান্দ ব্যাগ-স্যুটকেস নিয়ে মথুরা চলে গেছে দুঃখে – রাইরাণীর আজ আর যমুনার ধারে কাঁদতে বসা ছাড়া আর কি উপায় বলো!

“বিধিহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং যদর্চ্চিতং” – ক্ষমা চাইছি গো নাথ, আমার ভুল আর তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে কি লাভ? আমার ভুল। সত্যি-ই আমার ভুল। যা বিধিবৎ তাকে ফেলে নিজের মত করেছি – সব ক্রিয়াকর্ম যদি আজ বিফল হ​য়ে থাকে, তার দায় আমার ছাড়া আর কার হবে? তোমার বিধান মানি নি, তোমার বিহিত কর্ম করি নি – যা বা ভক্তি নিবেদন করেছি, সব আমার মতে করেছি – অপরধ করেছি বৈ কি! তাই প্রসাদ রূপে যা শাস্তি দেবে, যা দণ্ড দেবে, এই মাথা পাতছি, এই মাথা নত করে সব গ্রহণ করছি – তোমার যজ্ঞের এই উচ্ছিষ্ট আমার মহাপ্রসাদ – তোমার উপেক্ষা, তোমার নিষ্টুরতা, তোমা বিহীন জীবন – আজ সব পূর্ণরূপে অমৃত হ​য়ে গেল আমার কাছে – যা ছিল নৈমিত্তিক, যা ছিল কাম্য, আজ হ​য়ে গেল নিত্য! – যাবজ্জীবৎ ভোগ করব – তোমার প্রসাদেই, হে নাথ – “ত্বৎপ্রসাদাৎ!”

“ত্বং গতি পরমেশ্বর” – তুমি-ই গতি আমার! তুমি ছাড়া গতি নেই আমার! আমার কায়-বাক্-মনে – “কায়েন মনসা বাচা” – যা ত্রুটি হ​য়েছে, তার ক্ষমা তুমি ছাড়া আর কে করতে পারবে? যা মন্ত্র-তন্ত্র সব গেছে মাত্রা-অক্ষর-ভ্রষ্ট হয়ে, হে নাথ, সব ক্ষমা কর আজ – “কস্য ন স্খলিতং মনঃ” – বলই না, কারই বা প্রেমের আঘাতে-ব্যাঘাতে মন-মাথা ঠিক থাকে?

ঠাকুরমশাই ব্যাথিত নয়নে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ইষ্টবিগ্রহের হৃদয় স্পর্শ করে কিঞ্চিৎ চালনা করলেন – “ক্ষমস্ব​!”

“এবার?”

ঠাকুরমশাই দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন – “এবার ত চলে যাবে?” কে আর পারে বলো, নাথ, তোমায় রাখতে হৃদ​য়ে? এবার ত “গচ্ছ গচ্ছ পরং স্থানং” করে চলে যাবে – তোমার আসা মানেই তো চলে যাওয়া – থেকেও না থাকা – ধরা দিয়েও অধরা।

যাও, যাও – “যথাসুখং” – যেমন খুশি, যেমন ইচ্ছে, যেথায় তোমার সুখ, যাও চলে যাও – আমার রাজ্য শূন্য আজ, আমার গৃহ শূন্য আজ – আজ সর্বত্র শূন্যতা – আজ ত তোমার ভাসান, আজ ত আমায় অকূল দরিয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে যাবে তুমি।

হে নাথ, আর পারছি না নিতে! কতবার আসবে, কতবার যাবে – তোমার আসাতে প্রেমাবেগে মাথা হারিয়ে ভেসে যাই – আবার যাওয়াতে শোকাকুল হ​য়ে আবার মাথা হারিয়ে ভেসে যাই – আর পারছি না, হে নাথ, আর পারছি না নিতে! – “কিং করোমি বদস্ব তৎ” – আমি কি করব আমি জানি না – তুমিই বল​, তুমিই বলে দাও।

এবার তুমি নিয়ে চলো – আর ফেলে রেখে যেও না – এই চঞ্চল ভবার্ণবে কত ভাসাবে আমায় তোমার আসা-যাওয়ায়? – “ত্রাহি মাং ত্রাহি মাং” – এবার তোমার সাথেই যাব – যতই গভীর স্রোত হোক, নাথ, বিলীন হব তোমাতে – এবার আর ফেলে রেখে যেও না – নিয়ে চলো – নিয়ে চলো সঙ্গে – “গচ্ছ দেব মমান্তরং”

ঠাকুরমশাই দর্পণটি হাতে তুলে নিলেন। ছোট্ট আয়না। আজ যেন কত ভারী হয়ে গেছে।

এই সেই দর্পণ – এই সেই উমার দর্পণ! মহেশ্বরের বামাঙ্গিনী হ​য়ে যিনি বিলাস করেন ও তাঁকে প্রেমে বিমোহিত করেন – তাঁরই ব্রহ্মাস্ত্র। যেই শিব চরাচর জীবের হৃদ​য়ে বাস করেন – জীবদেহ মধ্যে প্রবেশমাত্র নিজেকেই ভুলে যান – তাঁর সম্বিৎশক্তি-ই তাঁকে নিজের কাছ থেকে আড়াল করে রাখে – সদাশিব নিজেরই প্রকাশে নিজেই অদৃশ্য হন।

সেই উমাই ভালবেসেছিলেন তাঁকে – ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন। সতীরূপে মোহগর্ত্তে ফেলে দিয়েছিলেন। উমারূপে মুক্তি দিয়েছিলেন। জগৎবিমোহিত মহেশ্বরের মুখে আয়না তুলে ধরে বলেছিলেন- “দেখ! দেখ! নিজেকে দেখ! চিনতে পারছ?” – মনে করিয়ে দিয়েছিলেন – নিজেকে নিজের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

সম্বিৎশক্তি দিয়েই মোহবন্ধন। সম্বিৎশক্তি দিয়েই মোহভঞ্জন। সেই উমাই আত্ম-সাক্ষাৎকার করিয়েছিলেন – মুক্তি দিয়েছিলেন। এই সেই উমার দর্পণ। উমার মোক্ষদা ব্রহ্মাস্ত্র।

ঠাকুরমশাই উমাজ্ঞানে দর্পণ নিজের মুখে ধরলেন। শিবজ্ঞানে দৃষ্টিপাত করলেন।

ঠিক চিনতে পারলেন না নিজেকে।

কোথায় সেই চিরসাধক? কোথায় তাঁর আরাধ্য ইষ্ট? কই সেই ইষ্টের বিগ্রহ? কোথায় সেই সাধকের সাধনা? কোথায় শোক? কোথায় ভক্ত? কোথায় ভক্তি? কোথায় প্রেমিক? আর কোথায় তার প্রেম? কোথায় গেল এত এত যুগের টান, এত ক্লেশ? কই জগ​ৎ? কই বন্ধন? কই মোক্ষ? সবই কেমন যেন ঘেঁটে গেল –

ঠাকুরমশাই ইষ্টস্রোতে প্রবেশ করলেন।

ঠাকুরে মিশে গেলেন।

আত্মবিসর্জ্জন দিলেন।

চিরসখা স্মরণে, চিরতরে
বর্ধমান, দীপাবলী অমাবস্যা,
৪ নভেম্বর ২০২১

Consolations, #1

“Mountains are formed over a period of time,
Galaxies change their shapes gradually
& we grow old slowly.”

1
Gather your pebbles, each one,
& gather your firewood, day by day —
The hearth won’t burn as bright every day and
Often the water will take longer to boil on the flame.
Not every day will be sunny, or perhaps warm enough;
Some days, there won’t be enough firewood,
And sometimes your water bucket will leak—

but you will be okay…

2
Sometimes the roof will leak, and the lights will go out—
Sometimes your stomach will rumble in hunger and
The cupboard will be empty in the dead of the night—
Sometimes the stove won’t work properly, and some nights
You won’t be able to sleep, tossing and turning in your bed—
And the long night will refuse to pass—
But all darkness turns to light, slowly and steadily—

and you will be okay…

3
You will know heartbreak—
For all who know love,
must come to know grief…
Sometimes your chest will ache with love,
because you want to tell someone
how much you love them,
For you’re quite sure they don’t quite know;
And sometimes they won’t care…
No matter how much you love them,
They might speak a different language of love—
Yet you will love again—and lose again—
And come to grief again, and gradually—

you will be okay…

4
Some days you may be loved
more than you ever imagined—
And some days you won’t receive the love you need,
And some days: none at all.
Perhaps being in love is like a garden:
Some days are meant for bright blossoms,
And some days are meant for quiet breezes,
And some for falling leaves & bloomless winters—
Perhaps love is all about waiting and patience,
and about letting go…
Perhaps like the mighty oaks—

love grows strong roots slowly…

5
Some days you will miss, and stay forgotten—
Some days you will be missed, and forget to care…
Some days you won’t be as perfect as you think—
Some days you will be wrong, and unfair, and selfish…
And on other days, you will learn to be patient, and kind, and forgiving.
One by one, you will prune the weeds and tend to the garden of the Self…
Over long days and long nights—
Slow as the dawn, learning from our mistakes—

we will grow old slowly…

6
Sometimes it will be difficult, and painful,
and you will curl up into the darkness
and weep your heart out in the silence—
And you’ll never want to go out in the light again—
But step by step, day by day, your pain will lessen…
Sometimes the memories of the pain will hold you back,
And sometimes the future’s hope will give you courage—
And day by day, you will be whole, out of all the pieces—

just like mountains are formed over a period of time…

7
Maybe you once liked your eggs scrambled,
but now you like them boiled—
Maybe you loved picking apples and biting them,
but now the taste of cider makes you sick—
Maybe you hated cloudy days once, but now
You get that you need them once in a while—
You are—and become—as you change:
Bit by bit and taste by taste…
Memories fade and newer ones are made—
Many loves are born and lost in the long course of life—

we are like galaxies, changing their shapes gradually…

8
You will lose people.
As time passes,
people will make their entrances
and their exits—
and you must let them.
As days come and days go, so do all things,
ever-returning, ever-renewing—
Someone you talked to everyday,
but whose name now slips your mind:
only a faint snug warmth remains now—
Someone you wished would talk to again,
but remembers you no more,
slowly fading into the oblivion—
Strangers come, and strangers go,
and we know them only ever so briefly…

and that’s okay…

9
Sometimes you will be invisible,
and not find the attention you need—
Sometimes your struggles will go unnoticed,
and all your sacrifices unappreciated—
Sometimes you will be jealous and resentful
of the attention that others get—
Sometimes you will feel that you don’t exist
or that your existence doesn’t make a difference.
Like the moon that is lost in the anvil’s darkness,
You too will get lost at times in the new moons of life—
You will struggle to hold yourself together and in time,
you will find the light you seek within you—

and you will be okay…

10
Sometimes you will find yourself flooded
with attention, and praise, and cheers—
Sometimes a million fans will cheer you ahead,
and you will feel great in their chorus—
Sometimes you will revel in the limelight,
proud of what is deservedly yours—
And at times, the cacophony will stifle and suffocate you too.
Sometimes your struggles will fetch you a million validations,
yet each as hollow and perfunctory as the next:
they will not warm your heart—
Sometimes you will find it hard to know what or who is genuine…
Sometimes you will be trapped within the millions’ gaze,
and forget who you were once—

but you will be okay…

11
Some days love will run dry—
Some days the sparks won’t fly,
and the love will feel like an irritation—
Sometimes there will be nothing new to talk about,
for days and weeks on end—
Sometimes, in the monotony, you will question
why you bother to stay and not move on…
Perhaps you will remember the birds
whose wings take them to places afar,
yet who choose to return home each day.
Perhaps you will remember the cattle who graze newer pastures,
and yet come home happily at the call of the eventide—
Sometimes love is silent, and invisible, and deaf, and mute—

and you will be okay…

12
Sometimes it will be time to let go,
no matter how hard or devastating it feels…
Houses become cages,
and families become prisons,
and places become poisonous,
and no matter how much the comfort of familiarity,
You have to brave the unfamiliar for your own sake.
Old idols, however sacred, must be immersed in the water,
and newer ones made out of the fresh, wet clay…
Sometimes life unmakes you—
and sometimes you have to do it yourself…
Keep repairing and renewing,
with care and gentleness—

and you will be okay…

13
Sometimes your emails will remain unanswered,
and your DMs and notifications will overflow—
Sometimes you will ignore some messages,
or forget to reply to people—
Let not the crowd of applauding followers make you forget
that they do not own you, or your attention, or your time.
You cannot rescue the whole world, nor heal all its woes—
no matter how sad it makes you to realize that—
Beyond the race for likes and comments and views,
Be gentle on yourself first, and begin your own healing,
for you too belong to this world—

and you will be okay…

14
Not all hearts mend, or become whole.
Not all wounds heal, or become whole.
Not all lights shine throughout, or brightly enough.

Even in all your brokenness,
Amidst all your pain and grief,
Through the dark nights of the soul,
May you find yourself—and keep yourself—
in your own serenity.

Let the days come like leaves on the branches of your life—
Growing and falling, bearing both joy and sorrow—
and may they keep you in contentment.

May you be at peace,
whoever you are,
wherever you are…

15
“You are a child of the universe,
no less than the trees and the stars:
you have a right to be here.”


You will go through the seasons
of joy, ecstasy, sorrow, and grief—
And you will grow buds, and bloom, and wilt—
And you will wax, and wane, and wax again…
And your skies will be filled with stars—
And be cloudy and be sunny—
And the earth beneath your feet will be fertile and be barren,
And many storms and breezes will blow by your life’s chapters—

You will find your sun, and wind, and water—
and you will be okay…

16
“Mountains are formed over a period of time,
Galaxies change their shapes gradually
& we grow old slowly.”


May you be at peace,
whoever you are,
wherever you are.



For all of us
Delhi, 2023

Untitled Verses, #9

What will I do, poet,
with your oceans of love?
My heart is scattered away
on a million desolate shores
where they thirst for but a drop.
Break your waves upon them—
Poet, I hope you love me right.

Your poesy has conjured up rains:
What will I do, poet,
with your heavy rain-clouds?
My lips are parched in the hunger
of a million starving stomachs
and parched throats…
Bring us here your bountiful harvests—
O poet, I hope you love me right.

What will I do, my poet,
with all your words and song?
My ears are lost in the cacophony
of the stories of the voiceless.
Lend your pen to all lives unwritten—
O my poet, I hope you love me right.

What will I do, lover,
with your silks and silver?
My skin erupts and burns with
the fevers of the homeless
and the poor on the streets…
Which king’s shawl is large enough?
Beloved poet, I hope you love me right.

Don’t give up love on me, poet:
for my path forks a million ways.
Don’t give up loving me, poet:
I want to be loved a million ways.

I hope you love me right.
I hope you love me right.

For RS—
Delhi, Māgha Śuklā Dvādaśī,
The 2nd of February in 2023.


Meditations on Death, Part II

I revere that Kālī who sits in the ring of fire, her laughter echoing through the fuming charnel grounds.

I revere that Kālī who sits atop cold and rotting corpses, drinking and making merry on rum and gore.

I revere that Kālī who has worn bones and flayed skin, hiding nakedness with nakedness, staring through undeceived bloodshot eyes.

I revere that Kālī who prowls the burning ghats at night, dancing amidst the howls and screams, laughing at the wails of the living.

I revere that Kālī who has bathed in blood, and now baptized in death, does not fear mortality anymore.

My salutations to that Kālī, that harbinger of fearlessness, whose mirth and amusement destroys the death that haunts the living, and scatters the living that grieve the dead.

My salutations to that Kālī who has severed bodies and rained blood, and set afire and looted and destroyed, and now sits freed and victorious upon her inviolable throne.

My salutations to that Kālī who has found salvation for the living in the great dances of death.

Bardhaman, Āṣāḍha Kṛṣṇā Ṣaṣṭhī,
The 11th of June in 2020.

Meditations on Death, Part I

Death hovers, constantly. To someone who’s been living with the darkness for a decade, I say: death hovers, constantly. Yet it does not incite fear nor warrant fetishes of dying. It simply hovers, constantly at the edge of your thoughts, at the edge of your feelings, at edge of the day, at the edge of the night. Like the ignored borders of paintings and frames of canvasses, it becomes visible: present, as it were, by its absence.

I feel (or maybe I imagine feeling) every skin, bone and muscle decaying; I feel every coursing drop of blood wring itself of life and drain away. I feel every parting breath as preparing to depart life’s decadent coils. Yet I do not say this for the romanticism of dying. I say this, perhaps, because I feel every inch of life colored invisibly in the brushstrokes of life. Perhaps it is the oil that holds life’s colors together. Death’s sanguine advent orients a conscious living. I do not rush away from death, nor do I spring towards it. It comes each day, closer. To Death, I say: come, freely, stripped of aversion or attraction.

Life’s mechanicality overcomes. Each day is an episode in the great TV season. But it moves without a plot; maybe it does not even ‘move’ at all. Perhaps that it why we crave adventures; we love a good story. All great biographies are fictions with great plots. Destiny becomes that great literary device; and history, that great canvass.

Death becomes, then, that covers of that blank diary, that absurd edge of the canvas. Make your story count, the muses scream; for the clock ticks, the paint dries, the ink fades and your canvas runs out. Make sure you write a good story; make sure your scribbles and brushstrokes make some meaning out of all the junk.

But what if you say: I won’t paint, nor will I write? My scribbles will remain incomprehensible to all who read it; my brushstrokes will be alien and unsettling to all those who set their sights upon it. What then? What if I write an incomplete story, or paint an absurd scene? Or what if I hand in a blank answersheet at the examiner’s bell?

Would the world say he would be truly mad? Would the world say he was a failure? Or perhaps he’d tell the world that it was truly mad. Perhaps the world would be a failure to him. Perhaps he would threaten the world’s sanity, by exposing its insanity.

Bardhaman, Āṣāḍha Kṛṣṇā Ṣaṣṭhī,
The 11th of June in 2020.