কেমন ভাবিয়ে তুললে

―কি হে?
―বলো।
―গতকালের দক্ষযজ্ঞে গেসলেন?
―Yes
―আর? সব লণ্ডেরে ভণ্ড করিলেন?
―LOL
―মহাললিতের দক্ষযজ্ঞে কত লণ্ডেরে করেছ ভণ্ড
   ভূতের কেত্তন পিশাচ নাচন ডিস্কো ফ্লোরে শিবের গাজন!
―তুমি কবিকঙ্কন, LOL!
―হাহাঃ, সেই!

―কি করছিস?
―এই, ছাদে এসছি।
―ঝাঁপ-টাপ দিবি না তো আবার?!
―দিতেই পারি। তোমায় police ধরবে।
―এই রে! কেন?!
―কেউ পাত্তাই দিলো না যে–
―যাঃ! এইত্তো, আমি পাত্তা বই কি দিচ্ছি?
―কি জানো তো? রোব্বার বিকেলে sex না জুটলে শিক্ষিত বাঙালী মৃত্যু চিন্তার বিলাসিতা করে থাকে– সেই রকমই আর কি–
―বুঝতে পারছি না যে হা-হা করে হাঁসবো না হাহাকার করবো!
―তুমিই দেখো কি করবে।
―দেখো আবার! হাঁসি ঠাট্টা দিয়ে গভীর কোন ভাবনা লুকোচ্ছো না, তো?
―গান গাই, শোন– ban jayenge zahar peete peete, ban jayenge zahar peete peete, ye ashq jo peete ja rahe ho– সুনির্মল বসুর একটা কবিতা ছিল– নাম ছিল “সবার আমি ছাত্র”– “আকাশ আমায় শিক্ষা দিল, উদার হতে ভাই রে। কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে।”– ওইখানে একটা ছিল সহিষ্ণুতা– আমি অনেকদিন ধরে মনে করার চেষ্টা করছি– মানে, তোমার নামটা যবে থেকে শুনেছি– কিছুতেই মনে পড়ছে না।
―মাটি হবে নিশ্চয়ই।
―তাই হবে বোধ হয়।
―দাঁড়া, দেখি– হ্যাঁ, এই যে– “মাটির কাছে সহিষ্ণুতা, পেলাম আমি শিক্ষা, আপন কাছে কঠোর হতে পাষান দিলো দীক্ষা”– কি অদ্ভুত, জানিস? এই যে “human” শব্দটা এবং “humility”, এও Latin-এর “humus” অর্থাৎ earth বা soil থেকে– মাটি বহু সংস্কৃতিকেই প্রেরণা দিয়েছে।
―এই যে– ঠিক এই জন্যেই! সাধ করে কি আর লোকে তোমায় আঁতেল বলে?
―আর কি করবো বলো?
―শোন না, আজ সন্ধ্যায় কি করছো?
―কেন? কি আছে মাথায়? Meet?
―না! সংকীর্ত্তন!
―তা ভালো তো! Who doesn’t like a good হরিনাম সংকীর্ত্তন? সবাই তো এখন রাম নামে নাচ্ছে– চল, তুই আর আমি না হয় একটু হরিনামেই মাতি।
―তুমি না, one of the few people I have met in my life who isn’t floored with what I say– I like your comebacks!
―দেখেছিস? আঁতেল হওয়ার benefits দেখ!
―হাহাঃ, সেই– আচ্ছা, তুমি কোথায় থাকো?
―ভক্তবৃন্দের হৃদয়ে!
―আহাহাঃ, শয্যায় এসো হে! বলো না গো, প্রাণগোবিন্দ, কোথায় থাকো?
―বর্ধমানে। যদিও এখন বালিগঞ্জে। তুই কি করছিস এখন?
―বললাম তো– সংকীর্ত্তন!
―আচ্ছা নে, চল। আমি ঠাকুরের বইগুলো আনছি, পাশের বাড়ি থেকে তানপুরাটা আনাচ্ছি– আর কাজের মাসি খঞ্জনী বাজাবে– আমরা সবাই আসছি তাহলে? কেমন?!
―উফ্! আরে, আলমারি গোছাচ্ছি।
―তা গোছাও। জীবন বড্ডই অগোছানো থাকে, গুছিয়ে নেওয়া তো অসম্ভবই প্রায়। Life is too messy. কিন্তু আলমারি গুছিয়ে একটা সুখ আছে– একটা পরিপাটি জীবনের illusion দেয়। একটু-আধটু indulge তো করতেই হয়, কি বলিস?
―এটা absolutely, absolutely true!

―কি করলে আজ?
―ওই যে– Asiatic Society-র পুরনো বইয়ের sale চলছিল– পুরো লুটে এনেছি!
―কি বই কিনলে?
―আশ্বলায়ন-শ্রৌতসূত্র, বৈখনস-শ্রৌতসূত্র, মাধবাচার্যের ভাষ্যসহ আশ্বলায়ন-গৃহ্যসূত্র, rare copies সব!
―শুনে আমার মাথা ঘুরছে!
―ধরটাও ঘোরা, উল্টোদিকে। Counter-balance হয়ে যাবে।
―উফ্! তুমিও না! আচ্ছা, এসব পড়ে কি হয়?
―আড়াই হাজার বছর আগে লেখা, কোন সে সুদূর দেশে, কোন বিলুপ্ত ভাষায়, কিন্তু ভাব, বেদনা, আশা, সবই আজও বর্তমান। শতশত বর্ষ পেরিয়ে যায়, কিন্তু মানব জীবনের কাঠামো কেমন যেন সময়ের আক্রমণেও স্বতত্ত্রই রয়ে যায়, তারই রসাস্বাদন, এই আর কি– এই ধরো “আ হরয়ৎ তে হৃদয়ন্তদস্তু হৃদয়ং মম অথো যন্মম হৃদয়ং তদস্তু হৃদয়ং তব। হৃদয়েন হৃদয়ং প্রাণেন প্রাণমগৃভং গৃভ্নামি চক্ষুষা চক্ষুর্গৃভ্নামি মনসা মনঃ॥” মনে হবে যেন কি আজে-বাজে বকে যাচ্ছে– অথচ এ কাব্য আজও জীবিত– বিবাহ-পার্বণে অজান্তেই এই প্রয়োগ– কিন্তু কি মানে? “”I have stolen thy heart; may that now be my heart. And this heart of mine; may that now be your heart. With the heart is the heart grasped, with the spirit, the spirit. I grasp thy eyes with my eyes; I grasp thy mind with my mind.” দেখোই না– অচেনা শব্দ, বিলুপ্ত ভাষা থেকে কেমন এক জগৎ খুলে গেলো– a metaphor of union in love!
―হ্যাঁ। এর cadence-টা খুব strong.
―আর কিছু কিছু phrase তো translate করা যায়ই না, এতই মুশকিলে– কিন্তু আবার ততই সুন্দর– যেমন এক জায়গায় প্রেমপাত্রকে সম্বোধন করা হচ্ছে– যে আমার কামনা দ্বারা তোমায় আবদ্ধ করছি– কিন্তু কিসের জন্যে? অবিমোচনায়– অবিমোচনার্থে– বিমোচন মানে উন্মুক্ত করা, খুলে দেওয়া– কিন্তু সেটি উল্টে এ এক অদ্ভুত শব্দ– অ-বিমোচনায়– যার মধ্যে একই সঙ্গে যেমন বন্ধনের দৃঢ় কামনাও আছে, তেমনই যাতে সেই বাঁধন কোনদিন ভেঙ্গে না যায়, সেই ব্যাকুলতাও আছে– দুইটি emotion একটি শব্দেই।
―আসল text টা কি?
―”কামেন য়োক্ত্রেণ ত্বা য়ুঞ্জামি অবিমোচনায়!”
―কি সরল ভাব, অথচ গম্ভীর ভাষা!
―তোরও কি ভাগ্য দেখ! জিজ্ঞেস করলি কি বই কিনলাম, আর তিন পাতা আঁতেলের প্রলাপ বকলাম!
―কি আর বলবো? খাল খেটে কুমির এনেছি যখন, কুমিরের কামড়ও খাই!
―হাহাঃ, বেচারা! বলি, কখন ঘুমাবি?
―এই তো, এখনই– I am glad I gave you my number, by the way.
―ধন্য আমি– good night, then.

―তোর ওপর আমার dibs রইল, কেমন? লম্বা line আছে বলেছিলিস, after all.
―Dibs মানে?
―মানে I stake my claim.
―টাকা দিয়ে?
―ধন দিয়েই নিশ্চয়ই, কিন্তু আর্থিক না-ই বা হল। লাভ-লোকসানের বাইরেও তো অঙ্ক হয়।
―Sigh
―দীর্ঘশ্বাস কেন?
―জানি না।
―বড়ই প্রিয় হয়ে গেছো, তারই টান। এই-ই যা। তাই এই সব কথার ক্ষমাও চেয়ে রাখলাম।
―কিন্তু আমি এর যোগ্য নই।
―প্রেম কি আর যোগ্যতার competition? এ কি industrialized দুনিয়ার meritocratic ভ্রম– যে যোগ্য না হলে হয় না? প্রেম তো দান– মুক্ত ভাবে দেওয়া– “শ্রদ্ধয়া দেয়ম্। শ্রিয়া দেয়ম্। হ্রিয়া দেয়ম্। ভিয়া দেয়ম্। সংবিদা দেয়ম্।”– বাকি সবই বৃথা।
―না! তা হয় না! প্রেমের দান simply দেওয়া যায় না। প্রতিগ্রহণের অপেক্ষায় থাকে। আর এই দান গ্রহণের বল নেই আমার। কি-ই বা দিতে পারবো বলো? নিজের বলতে তো শুধু এই দেহমাত্রই! এবার হয়তো তুমি বলবে– তাও না!
―বরং উল্টোটাই! আমরা নিজের বলতে দেহ ভেবে কতই না ভুগি। যেন নিজ অর্থে “what is ours” or “what belongs to me”, কিন্তু বাংলায় ভেবে দেখো– সে-ই নিজ, যে আমার। আবার সে-ও কিন্তু নিজ, আমি যার।
―Sigh. খুব ভোগাবে আমাকে তুমি!
―একে অপরের কপালে ছিলাম।
―সেই!
―কিন্তু আমার মনে হয় তুই প্রতিগ্রহণ আর প্রতিদান গুলিয়ে ফেলছিস। ধর, আমি যদি বলি যে এই দান একই সঙ্গে দানও বটে, আবার প্রতিগ্রহণও বটে। নিজ হতে দেওয়া, আবার নিজ মধ্যেই গ্রহণ করা। এ তো এমন নয়, যে কেউ ভালবাসলে, উল্টে ভালবাসতেই হবে। প্রতিদান না থাকলেও দান দান-ই রয়ে যায়। To accept love is not to love ‘in return’, but to permit oneself to be loved. যদি বলি, যে প্রতিগ্রহণ মানে কেবলমাত্র প্রেমের দান ভোগ করার অনুমতি দেওয়া নিজেকে?
―জানি না পারবো কিনা, নিজেকে সেই অনুমতি দিতে।
―অস্তমিতে তুমি-আমি তো সেই নিমিত্তমাত্রই– দাতাও সেই বংশীধারী, প্রতিগ্রহীতা সে-ই– আমরা নিমিত্তমাত্রং–
―আসল ভালবাসা কি তাহলে দৈবিক?
―তা নয় তো কি? সৃষ্টি তো আমরা করিনি, আর এর বিনাশও আমাদের উর্ধ্বে– কেবল স্থিতিরই বাহনমাত্র। ভালবাসার লোকেরা ভালবাসে, এই অবধিই– কিন্তু ভালবাসাটা ঠিক কি? সে তো হাওয়ার মতন। প্রেমিকরা কালগর্ভে মিলিয়ে যায়, শতশত বৎসরের স্রোতে– কিন্তু প্রেম রয়ে যায়, অনাদি অনন্ত ভাবে। কোন প্রাচ্যে বিলীন হয়েছে পূরাকালের প্রেমিক, কিন্তু তাদের প্রেম আজও অমর। তা সেটা দৈব না হলে কি, শুনি?
―না! না, এরকম হয় না! এই সমস্ত কেবলই concept– আসলে হয় না।
―তুই ভেবেই দেখ, না। যদি বলি এই “আসল”-ই মিথ্যা এবং সেই দৈব-ই আসল? যদি বলি যে আমাদের সবার মধ্যে এই দৈবত্ব বিরাজমান– কিন্তু ভয়ে-সঙ্কোচে-স্বার্থে সেটাকে মিথ্যা, কাল্পনিক বলে সাজিয়ে রেখেছে এই সমাজ। এই ভয়ে যে আমরা প্রেমের যোগ্য নই– এই সঙ্কোচে যে প্রেমের প্রতিদানে যদি কিছু না দিতে পারি–বা স্বার্থপরের মতন কেবল ভালবাসা পাওয়ার আশাতেই ভালবেসে। তাহলে–?
―কেমন ভাবিয়ে তুললে, সহিষ্ণু!
―ক্ষমা চাইবো, না কৃতজ্ঞতা?
―বুঝলাম না!
―এই যুগ বড়ই বাঙ্ময়– it is a loquacious age– ফোন, মোবাইল, ইমেল, চ্যাট, টিণ্ডার, ইত্যাদি– কথা হতেই থাকে, কথার বন্যা বয়ে যায়, কিন্তু প্রকৃত ভাবে কথা বলি না আমরা– কথা বলি, কিন্তু কথা দিয়ে কথা ঢাকি– কথা বলি, কিন্তু শুনিনা– শুনি, কিন্তু বোধ হয় না– বোধ হলেও ভাবি না, ভাবাইও না– ভাবনা ছোঁয়ে না। সবই যেন rehearsed. তাই যখন কেউ সত্যিকারের কথা বলে ফেলে, আমরা চিন্তায় পড়ে যাই– এই যুগে যে আর ভাববার অভ্যাস নেই। তুই বললি ভাবিয়ে তুললাম– তো সেটা কি মন্দ করলাম যার জন্য ক্ষমা প্রাপ্য? নাকি ভালো করলাম যার জন্য কৃতজ্ঞতা কাম্য?
―তোমার কথাগুলো ভেবেই যাচ্ছি।
―ভেবেই যাচ্ছো?
―হ্যাঁ।
―আমাদের ভাষাটাও কি অদ্ভুত, দেখো– English-এ আমরা আলাদা করে বলি– “I am thinking” আর “I am feeling”–কিন্তু বাংলায়, “আমি ভাবছি” এর মধ্যে উভয় ভাবই আছে– এমনই যেন চিন্তা ও অনুভূতি দুইটিই এই “ভাবনা”-য় আশ্রিত।
―তা ঠিক।
―দাঁড়া, কেউ বেল দিলো– আমার এক বন্ধুর আসার কথা।
―যাও, বন্ধুর সাথে কথা বলো এবার।
―যাঃ! বন্ধুর সাথেই তো কথা বললাম এতক্ষণ!
―আরে– যে বন্ধু সাথে আছে।
―তুমিও তো সদাই আমার কাছে– দূরে আর কই?
―সে-ই– অবিমোচনায়।
―একদম– অবিমোচনায়!

―পরে কথা হোক?
―তথৈবাস্তু।

পশুপতিনানুপ্রেরিত নন্দী
বর্ধমান, পৌষ শুক্লা দশমী,
The 5th of January in 2020.

প্রকৃত গ্রহণ

আমার দেহ আপন করি পেয়েছো নাহি মোরে—
মোহ-মায়ার আলিঙ্গনে জেনেছো অপ্রাপ্তিরে।
ত্যাগি মোরে, দেহ-বিমচনে, জগতেরে করি আপন,
হতবাক হয়ে পেয়েছো মোরে— জেনেছো প্রকৃত গ্রহণ।

You have made my body your own, yet you have not found me there.
All your embraces have come to naught, deluded that I am but my body.
My body turned to ash, and thus forsaken, you turned towards the world:
And lo! You found me at last— for now you knew that I was everywhere.

For D.B.—
Bardhaman,
Phālguna Śukla Ekādaśī,
The 17th of March in 2019 CE.

The Wilderness, #1

The water feared the ocean―
“What if I were to lose myself?”

“You would”, assured the ocean.
“You would lose who you are now.”

“But you would also find yourself―
Who you have been, in your being;
And where you have always belonged.”

And so, the water lost itself therein.
In the mighty depths, it was no more.
Only the ocean remained, indivisibly.

In the forgetfulness of the finite,
There lay a memory of the infinite.
The water forgot that it was once water:
And remembered that it was but the ocean.

For A. D.―
Bardhaman,
Pauṣa Śuklā Ṣaṣṭhī
The 1st of January in 2020 CE.

ছোট ছোট কথা

আজ সূর্য্যগ্রহণ। কথা ছিল চাঁদ ঢাকবে। ঢেকে দিলো মেঘে। গ্রামের সেই রাঙা মাটি রইলো কাদা মেখে।

― ও বৌ! আজ তোমার কাপড় মেলেও নেইকো কাজ। এই শীতের অকাল বরষে আশা ছাড়া কিছুই শুকোবে না কাজ।

জ্বালন সব ভিজে পড়ে। উনুন জ্বলবে কষ্টে। ভাত হতে দেরি হবে। এই উনুন ধারে বসো সবে। জড়সড় হয়ে। এই নাও, কুড়ো। ঠাকুমার গপ্পো শোনো। মাঝে মাঝে কুড়ো দাও। মন ভরবে। হাঁসি ঠাট্টার চাপে খিদে থাকবে ভুলিয়ে।

― দাদু, আজ তেল মাখবে না? গপ্পো শুনবো।
― রোদ যে ওঠে নাই, দাদুভাই। বড্ড শীত। ঘাটে খুব পিছল।
― এই খোকা! কাজ নেই আর তোর?! কম্বলটা পেরে দে দাদুকে।

খড়ের পালুইয়ে খীন আওয়াজ।
― এই খোকা – দেখে আয় রে! কুকুর ছানাটে ভিজে না যায় মরে!
― কাঁপছে গো, মা!
― সব্বোনাশ! মুছিয়ে দে রে শিগ্গির! এইনে, গরম দুধটা খাইয়ে দে। ওকে গোয়ালের কোণে রেখে দে। – হায়রে! গরুগুলো পাঁচদিন নাওয়াইনি। আজ আবার জল নেমেছে – কেঁপে মরে!

― মা, সেই ম্যাশিনটা কিনবে? জল গরম করে। বাবুদের ঘরে আছে!
― তুই আর বকিস না! কেন রে, তোর গায়ে বুঝি হাঁড়ির জল ঠেকবে না?
― শোনো ভাইয়ের কথা। তুই থাম তো!
― ও দাদুভাই। এনেই বা করবি কি? তার তো আছে, কারেন্ট যে নাই।

মেঘ ঘনিয়ে। দিন ঢেকে। ভোর আর সাঁঝ একই সাজে। উজ্জ্বল গ্রামে, স্বচ্ছ দেশে, আজও হ্যারিকেনই আলো দেখায়।

― বউমা, তুমি সন্ধে দিয়ে দাও। দেখো আবার। কাদা পিছল ভারি। আজ আর উনুন জ্বেলো না। মুড়ি আছে। দুধ দিয়ে খেয়ে নেবো।

― বউমা, ছেলেগুলো ঘর ঢুকেছে?― না, বাবা। ফোন করেছে। এই ঢুকছে। কার্ত্তিকদের ঘর হয়ে আসছে। কেরোসিন নাই। নিয়ে আসছে।

ভিজে মাটি। ভিজে ঘাস। শীতের দিনে আকাশ নিরাশ। কুকুর-গরু তেমন ডাকেই নি বেশী। কুয়াশা ঢাকা মাঠের ধার। জ্বলছে বিড়ি। একটু দেশী।

গায়ে মোটা কাপড়। মাথায় পাতলা ছাদ। পেটে কিছু খাবার। মুখে একটু স্বাদ। ঠাকুর আমাদের রাখেন কৃপায়। মলিন সুখে জীবন চলে যায়।

ছোট গল্পের ছোট্ট পুনশ্চ। কবিরা কিনা বড্ড ছোটলোক। বাক্য টেনে মোচড় মারে। প্রেম-কান্না ভাঙ্গিয়ে খায়। দেখোই না! নন্দী আপদ কলম ধরে। পশুপতির মন রাঙায়।

পশুপতির মিতবাক্যাদেশপ্রাপ্ত নন্দী
রাইপুর / Raipur, Pauṣa Amāvasyā,
The 26th of December in 2019 CE.

Ruin, #1

I’m dead inside now:
Murdered by your exit.
Your play goes on now,
New actors come to stage,
One face remains lost to it all.
Do you, O lover, ever miss him?

The cigars burn and the blood flows,
Into the tapestries of stain and smokes,
A life shattered into grief, sorrow and pain:
A triumph that would be, now in misery laid.

The books on the shelves are in flames,
Their ink has forgotten all their languages.
A blind reader, a deaf listener, a mute poet:
Behold, a slave set out to master the world!

Youth withers away. Resolve grows stubborn.
Hope bleeds as a haemorrhage draining the soul.
You have left me like the life that leaves the body,
And I lie here now, cold and ruining, forsaken forever.

In search of your departed ship,
I have bottled and sealed my soul.
I have set myself adrift at sea now.
Plunged into the ocean of memories,
I have remained but so dry of you still.

Lover! Does your kind heart not melt?
Have I spoken in tongues so unknown?
Have my words flowed as the watery ocean
Upon the ancient stones, barren and harsh?

What are love stories, but the tales of our deaths?
To love is to be with you, and death is to be without.

Tell me, lover, what it takes now?
Tell me what paths take me to you?
What words, what deeds, what intent?
This homeless man bares his skin
To the unkind tempers of the fates–
He has come for your refuge.

I am lost.
I know not where I go.
Nor where I come from.
I am lost, lover.
For my home has forsaken me.
And my destination deceives me.
I was born in you.
I am to die in you.
One thing has remained
Forever, O lover, the same.

Where else would I go? Why, lover, ever?
You belong to me, you belong to me!
And I, to you–one soul, in bodies twain.

For a lost muse—
Bardhaman, Āśvina Kṛṣṇā Caturthī,
The 18th of September in 2019 CE.